অতনু চক্রবর্তী
আলি আকবরের সরোদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উৎকর্ষের দিশারী। তাঁর বাদ্যযন্ত্রের টোকায় যে অতলস্পর্শী গভীরতা, সেই ধ্বনিমাধুর্য মুগ্ধতার প্রথম সোপান। রাগ-রূপায়ণে তাঁর শুদ্ধতা প্রশ্নাতীত। প্রথাগত কাঠামোর ভিতরে থেকেও কল্পনাশক্তি এবং সৃজনশীলতায় তিনি গড়ে তোলেন বহুমাত্রিক সম্ভাবনার অবকাশ। সুরবিহারের অনিন্দ্যসুন্দর স্ফূর্তির সঙ্গে যোগ হয় অনুপম অলংকরণ ও জটিল ছন্দের মাধুর্য। ধ্রুপদি গাম্ভীর্যের ভেতর থেকে ডানা মেলে খুশির বিহঙ্গ। জটিল লয়কারী এবং গতিময়তার জাদু আনন্দের পরশ হয়ে আসে। এক মগ্ন ধ্যানী যেন শ্রোতার সঙ্গে ঈশ্বরের সেতু নির্মাণ করে চলেন। শ্রবণ-অনুরণন পেরিয়ে এক স্বর্গীয় অনুভব সংযোজিত হয় বোধের ক্ষেত্রে। শ্রোতার মনে উন্মাদনার বদলে জেগে ওঠে প্রশান্তি_এক সুদূরপ্রসারী আবেগ। দশকের পর দশক ধরে এভাবেই আলি আকবর অতিক্রম করে গেছেন নিজেকে। ক্রমশ প্রসারিত হয়েছে তাঁর ক্যানভাস_তাতে বাহারি রং লেগেছে, যোগ হয়েছে নিত্যনতুন ব্যঞ্জনা। পেশাকে অতিক্রম করে সংগীত হয়ে উঠেছে তাঁর আত্মনিবেদনের মাধ্যম। রাজদরবার থেকে সংগীত সম্মেলন, রেডিও থেকে স্পনসর প্রভাবিত রাগসংগীতের আসর, লংপ্লেয়িং রেকর্ড থেকে ক্যাসেট হয়ে সিডি_ ধ্রুপদি ভারতীয় সংগীতের উপস্থাপনায় বহু পালাবদলের সাক্ষী ছিলেন আলি আকবর। এই বিবর্তনের ধারাবাহিকতার সঙ্গে এগোলেও কখনোই উৎকর্ষের প্রশ্নে সমঝোতা করেননি তিনি। বিরজু মহারাজ বলতেন, আলি আকবরের বাজনা আকাশ ছুঁয়েছে; ‘স্বর মে আলি, লয় মে আকবর_আলি আকবর।’ আলি আকবরের আসলে একের মধ্যেই অনেক। সংগীত চিন্তক-পরিবেশক-শিক্ষাগুরু-কম্পোজার-সংরক্ষক। যোধপুরের রাজদরবার থেকে লক্ষ্মৌ-কলকাতা-মুম্বই হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার রাজপথ কিংবা সান র্যাফেলে তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠা করা সংগীত মহাবিদ্যালয়_এই গ্রন্থে আমরা পাব স্বরসম্রাটের ব্যতিক্রমী জীবন-সফরের এক বহুমাত্রিক পরিচয়।
Reviews
There are no reviews yet.