বরিশাল জেলার মহিলারা গ্রাম। জলাজংলার এই বাংলাদেশে হিজলের-বটের_অশ্বত্থের নরম সোহাগ আগলে রেখেছিল যে শৈশবকে, দেশভাগের এক ঝটকা তাকে আছড়ে ফেলে কলকাতার রাজপথে। বিহ্বলতায় আচ্ছন্ন শৈশব অসময়ে শিখে নিয়েছিল ‘ছিন্নমূল’ জীবনের মনে, তার স্বতন্ত্র বর্ণমালা। কলকাতায় থিতু হওয়ার আগেই আবার পশ্চিমে পাড়ি_লালমাটির দেশ চাকুলিয়া। সেখানে শাল-মহুয়া_শিমুলে-পলাশে ‘লাল লাল, বন্ধু হল কিছু মাহাতো সাঁওতাল’। চাকুলিয়ায় কিছুদিন কাটিয়ে আবার কলকাতা। ততদিনে কৈশোর উত্তীর্ণ। একদিকে অনটনের সংসার, অন্যদিকে পড়াশোনা। পড়াশোনার পাশাপাশি জীবিকার সন্ধান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ও এল এল বি পাশ কের অধ্যাপনা শুরু বর্ধমানের জনপদ কাটোয়ায়। সুদীর্ঘ চৌত্রিশ বছর পার কের কাটোয়া কলেজ থেকেই অবসর। ছায়াছবির ইন্টারল্যুডের মতো আলাপচারিতার নেপথ্যে গ্রন্থে ফিরে ফিরে এসেছে বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত জীবনের নানান ঘটনা ও টানাপোড়েন আর কাটোয়া জনপদের শিক্ষা ও সংস্কৃতিজগতের প্রাণস্পন্দন। ছেচল্লিশের দাঙ্গা, সাতচল্লিশের দেশভাগ, উদ্বাস্তু জীবনের অভাব ও অনিশ্চয়তা জীবনকে দীর্ণ, ক্লিষ্ট করেছিল যেমন, তেমনই উস্কে দিয়েছিল বাঁচার তীব্র জেদ আর স্বপ্ন দেখার সলতেকে। ভরসা ছিল বামপন্থী জীবনদর্শনে। এই সম্পদটুকু আঁকড়ে জীবনের পাঠ নিতে নিতে পার হয়ে গেল অনেকগুলো বছর। জীবনের নানান চড়াই-উতরাই, ঘটনা-পরম্পরা আর চারপাশের অগণন মানুষের বিবরণ দিয়েছেন আটপৌরে ঢঙে। লেখকের আলাপচিরতার নেপথ্যে তাই আত্মজীবনী নয়, উত্তমপুরুষের দাপাদাপি নয়, বিস্তৃত ক্যানভাসে কথকতার সরল ভঙ্গিতে সাত দশকের খণ্ডচিত্ত তুলে ধরার এক অসাধারণ প্রয়াস। স্মৃতিকথা হয়েও স্মৃতিকথার অনেক বেশি_আলাপচারিতার আঙ্গিকে এক অনন্য চিকন কথাশিল্প।
₹300.00 ₹240.00
আলাপচারিতার নেপথ্যে / ALAPCHARITAR NEPATHYE
Out of stock
Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.
Related products
বিদ্যাসাগর – রমেশচন্দ্র মজুমদার
রমেশচন্দ্র মজুমদার
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত ‘বিদ্যাসাগর বক্তৃতামালা’-র এই মূল্যবান সংকলনটি একজন সংবেদনশীল বিদগ্ধ শিক্ষকের মহান অবদান।
সুবিশাল এই আলোচনায় আমরা ঋদ্ধ হই একদিকে বাংলা গদ্যসাহিত্যের উদ্ভব প্রসঙ্গে তাঁর মৌলিক ব্যাখ্যায় এবং অন্যদিকে নিরপেক্ষ মননের আলোয় প্রাচীন ভারতের বৈদিক যুগ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভকাল পর্যন্ত সময়ে সমাজে নারীজাতির বাস্তব অবস্থান, মহিমা ও অবদমিত নারীজীবনের অতুলনীয় করুণ চিত্রণে। এই সংকলন সেই নিরিখে সমগ্র নারীসমাজের যুগপৎ বিকাশ ও অবদানের এক ঐতিহাসিক দলিল।
রবীন্দ্রনাথ সম্পাদিতে বঙ্গদর্শন / RABINDRANATH SAMPADITE BANGADARSHAR
‘বঙ্গদর্শনের প্রথম অভ্যুদয়ে বাংলা দেশের মধ্যে একটি অভূতপূর্ব আনন্দ ও আশার সঞ্চার হইয়াছিল, একটি সুদূরব্যাপী চাঞ্চল্যে বাংলার পাঠকহৃদয় যেন কল্লোলিত হইয়া উঠিয়াছিল। সে চেষ্টা স্বাধীন চেষ্টার আনন্দ।’ বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শন সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ এই মন্তব্য করেছেন নবপর্যায়-বঙ্গদর্শন প্রকাশের আগে। তারপর তাঁকে নিতে হয় বঙ্গদর্শন সম্পাদনার দায়িত্ব। বঙ্কিমের বঙ্গদর্শন যেমন একসময় ‘আমাদের সাহিত্যপ্রাসাদের সিংহদ্বার’ খুলে দিয়ে নবযুগের সূচনা করেছিল, তেমনি বিশ শতকের প্রারম্ভে রবীন্দ্রাথের বঙ্গদর্শন আর এক নতুন যুগে প্রবেশের সুযোগ করে দিল। সেই নবপর্যায়-বঙ্গদর্শন বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে মননসমৃদ্ধ। অসামান্য প্রবন্ধসম্পদের জন্য। আমরা একালের পাঠককে সেই মননের জগতের সন্ধান দেওয়ার জন্য অধুনা দুষ্প্রাপ্য পত্রিকা থেকে কয়েকটি প্রবন্ধ গ্রন্থাকারে প্রকাশ করছি। বাঙালির মননের ইতিহাসে এক মূল্যবান সংযোজন এই গ্রন্থ।
মহাকবি কালিদাসের ইতিহাস / MOHAKABI KALIDASERITIHAS
সতীপতি ভট্টাচার্য
শেকসপিয়রের মতোই দুর্জ্ঞেয়, রহস্যময় ও কুয়াশাবৃত কালিদাসের জীবন। তাঁর জন্ম খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে, নাকি খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে_এ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক আছে। যা নিয়ে বিতর্ক নেই, তা হল শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়েও তাঁর অবিসংবাদী জনপ্রিয়তা। কীভাবে কোনো মহাকবি লোককবিতে রূপান্তরিত হয়ে ওঠেন, কী অন্যন্য পারম্পর্যে তাঁকে নিয়ে গড়ে ওঠে শত সহস্র কিংবদন্তী, কালিদাস অথবা কালিদাস-মিথ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তবে অভিজ্ঞানশকুন্তলম্, বিক্রমোর্ব্বশীয়ম্, মালবিকাগ্নিমিত্রম্ প্রভৃতি নাটকের রচয়িতা যিনি, তাঁর কলম থেকে উৎসারিত রঘুবংশ ও কুমারসম্ভব-এর মতো মহাকাব্য এবং মেঘদূত এবং কুমারসম্ভব-এর মতো মহাকাব্য এবং মেঘদূত ও ঋতুসংহার-এর মতো খণ্ডকাব্য, বাল্মিকী-ব্যাসের পর তিনিই যে শ্রেষ্ঠ ভারতীয় কবি তথা নাট্যকার, এ বিষয়ে প্রায় সকলেই নিঃসংশয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কালিদাস সম্পর্কিত কিংবদন্তী ও লোককাহিনিগুলিকে একত্রিত করে রচিত এই গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৩০ সালে। বাঙালির কালিদাস-চর্চায় যে আবেগ ও অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়, মহাকবি কালিদাসের ইতিহাস সেই ঐতিহ্যেরই নির্ভীক অনুসারী।
মাঝি বাইয়া যাও রে / MAJHI BAIYA JAO RE
আশিসতরু মুখোপাধ্যায়
অমর পাল লোকগানের সেই বিরল শিল্পী যাঁর কণ্ঠে গান আর শুধু গান থাকে না, হয়ে ওঠে দর্শন। ভাটিয়ালি গানের প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পীর জীবনও তাঁর কণ্ঠ-নিঃসৃত সংগীতের মূর্ছনার মতো ব্যঞ্জনাময়। এই গ্রন্থেই প্রথম ধরা রইল তাঁর কিংবদন্তী হয়ে ওঠার দীর্ঘ ঘটনাবহুল সংগ্রামময় কাহিনি। সেই আখ্যান তাঁর গানের মতোই সরল, মোহময় ও জাদুকরি। কিন্তু কেন এ মুহূর্তে অমর পালই দুই বাংলায় লোকগানের সবচেয়ে সম্মানিত স্বর? তাঁর কণ্ঠে আছে সেই হিরণ্ময় ঐশ্বর্য, যা আমাদের রোমাঞ্চিত করে অনির্বচনীয় আবিষ্কারের পুলকে। সে আবিষ্কার শাশ্বত এক জীবনবোধকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দে প্রোজ্জ্বল। প্রান্তিক মানুষের সহজিয়া জীবনে যে জাদু লুকিয়ে আছে, তার অপরূপ সৌন্দর্যকে আমরা চিনতে পেরেছি তাঁরই সৌজন্যে। ভাঙা নাওয়ের যাত্রী হয়ে জীবনের অকুল দরিয়ায় এই যে আমাদের অনির্দেশ ভেসে চলা, তার সূত্র তো বাঁধা আছে ওই সুরসাধকেরই মরমিয়া কন্ঠস্বরে।
Reviews
There are no reviews yet.