মহাসিন্ধুর ওপার থেকে / MAHASINDHUR OPAR THEKE
প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
সৃষ্টির আদি থেকেই ধর্ম আর সংগীত পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়েছে এক অমোঘ বন্ধনে। মনন, চিন্তন ও বোধের ক্ষেত্রে ফলত যোগ হয়েছে অনেক মাত্রা। সভ্যতার ইতিহাসেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেশে-বিদেশে বিকশিত হয়েছে ধর্মীয় সংগীতের ধারা। এই বই খুললে সেই ধারার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের এক সংক্ষিপ্ত ধারাবিবরণী তো মিলবেই, সঙ্গে প্রাপ্তি বিশ্বের প্রথম দশটি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় সংগীতের কাহিনি। এমন প্রচেষ্টা বাংলা ভাষাতে তো বটেই, পৃথিবীর অন্যান্য ভাষাতেও দুর্লভ।
মেদিনীপুরে দেশজ শিক্ষার ধারা / MEDINIPURE DESHAJ SHIKSHAR DHARA
সুব্রতকুমার মাল
ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পূর্বে সমগ্র বঙ্গদেশে, বিশেষত মেদিনীপুরে, দেশজ শিক্ষার এক সমৃদ্ধ ধারা প্রবহমান ছিল, তা ভেঙে পড়ল কেন ? ১৮৩৫ সালের অ্যাডামস-এর রিপোর্ট অনুসারে জানা যায়, অতীতে মেদিনীপুর শিক্ষার দিক থেকে সর্বাগ্রে ছিল। তাহলে এখানে ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের আগে কেন কালের করাল গ্রাসে এর অবলুপ্তি ঘটল ? এই গ্রন্থে আছে, প্রাক্ঔপনিবেশিক আমলে মেদিনীপুরে দেশজ শিক্ষার ধারা প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা, নারীশিক্ষার অগ্রগতি এবং লোকশিক্ষার অবস্থা। সেইসঙ্গে মেদিনীপুরের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলিও বিস্তারিতভাবে আলোচিত।
মিথকথা / MITH KATHA
অমিত ভট্টাচার্য
অন্ধকার থেকে অন্ধকারে নয়। অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণই মানবজীবনের সার্থকতা। প্রাচীন ভারতের শাস্ত্র-সাহিত্য–দর্শনই কেবল নয়, আধুনিক সাহিত্যেও যতদূর সম্ভব হয়েছে, প্রসারিত দৃষ্টি নিয়ে সেসবের মননসমৃদ্ধ দীপ্তি পাঠকের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার নিরলস প্রয়াস মিথকথা শীর্ষক গ্রন্থটিতে লক্ষণীয়। একদিকে পরম্পরাবাহিত সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশজনিত ভ্রান্ত ধারণা আপামর জনতাকে শিক্ষা-ডিগ্রি নির্বিশেষে এখনও কীভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে, অপরদিকে ঋষিদের কল্পকথায় রূপকাকারে চিত্তশুদ্ধির আবাহন_এই দুয়েরই প্রতিচ্ছবি মূর্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচিত চোদ্দোটি কাহিনিতে।
নেপথ্যদর্শন / NEPATHYADARSHAN
শ্রীনিরপেক্ষ
বিগত শতাব্দীর পঞ্চশ-ষাটের দশকে যুগান্তর পত্রিকায় শ্রীনিরেপক্ষ ছদ্মনামের অন্তরালে নবীন সাংবাদিক অমিতাভ চৌধুরীর ‘নেপথ্যদর্শন’ ধারাবাহিক রচনা ভারতীয় তথা এশীয় সাংবাদিকতায় নতুন যুগের সূচনা করে। অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃত হন তিনি। প্রশাসনের নানা অনিয়ম-অনাচার-অবিচারের ঘটনাকে পাঠকের দরবারে তিনি হাজির করেন অসামান্য সৎসাহস এবং আপসহীন মনোভাব নিয়ে। সেইসঙ্গে এই কলমের বহু রচনায় ছিল অপ্রত্যাশিত নানান মানবিক উদ্ঘাটন। এই কারণেই এই প্রতিবেদনগুলি নিতান্ত সাময়িক রচনা না-থেকে হয়ে উঠেছে সমকালীন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ইতিহাসের মূল্যবান দলিল। সেই সময়ের নবমূল্যায়নের জন্য আজও অপিরহার্য এই সংকলন।
আর্ট ও বাংলার রেনেসাঁস / Art O Banglar Renaissance
অন্নদাশঙ্কর রায়
২১টি পরস্পর-সম্বন্ধিত নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধে ‘আর্ট’ ও ৩টি দীর্ঘ প্রবন্ধে ‘বাংলার রেনসাঁস’ নিয়ে আলোচনা করেছেন অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর এই গ্রন্থে। দেওয়া ও পাওয়ার ছল বা উপলক্ষ্য বা মাধ্যমের নামই যে আর্ট, সে-কথা তিনি যেমন নিঃসংকোচে বলেছেন, তেমনই নির্দ্বিধায় ঘোষণা করেছেন, বাংলার রেনেসাঁস এখনও অসমাপ্ত। রবীন্দ্রনাথের অন্তর্ধানে তা নিঃশেষিত হয়নি।
নানা নিবন্ধ ও অন্যান্য প্রবন্ধ / NANA NIBANDHA O ANNANYA PRABANDHA
সুশীলকুমার দে সংকলন ও ভূমিকা অলোক রায়
আচার্য সুশীলকুমার দে-র বিখ্যাত গ্রন্থগুলি ইংরেজিতে লেখা হলেও তাঁর বাংলায় লেখা প্রবন্ধ-নিবন্ধাদির সংখ্যাও নিতান্ত অল্প নয়। সংস্কৃত অলংকারশাস্ত্র ও সাহিত্যের অবিসংবাদী এই পাণ্ডিত্যের ইংরেজি ও বাংলা ভাষা সাহিত্যেও অধিকার ছিল সুবিদিত। বাংলা ভাষা-সাহিত্য নিয়ে তাঁর লেখালেখির শুরু ১৯১৫ সালে। সাহিত্যালোচনায় সুশীলকুমারের অবলম্বন শুধুমাত্র আলংকারিকদের অনুশাসন নয়, পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্ব অর্জিত বোধও। লেখকের জীবৎকালে প্রকাশিত দুটি গ্রন্থ_দীনবন্ধু মিত্র (১৯৫১ সাল) এবং নানা নিবন্ধ (১৯৫৩ সাল)_বহুদিন যাবৎ মুদ্রিত না-থাকায় রয়ে গিয়েছিল পাঠকের দৃষ্টির অন্তরালে। এই দুটি গ্রন্থের সঙ্গে সুশীলকুমারের আরও কিছু দুষ্প্রাপ্য লেখা একত্র করে প্রকাশিত হল বর্তমান গ্রন্থটি।
সামবেদীয় সংস্কারকর্ম (Sambedia Sanskar karma)
প্রবীরকুমার চট্টোপাধ্যায়
বিধিপূর্বক সামবেদোক্ত সংস্কারকর্ম পালন এখন এক দুঃসাধ্য কার্যে পরিণত হয়েছে। সংস্কারকর্ম পালনের সময় মন্ত্রোচ্চারণ আবশ্যিক। অথচ সংস্কৃতজ্ঞানের অভাবে উচ্চারিত মন্ত্রের অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রয়ে যায় অবিদিত। অর্থবোধহীন মন্ত্রোচরণের ফলে শূদ্রত্ব থেকে দ্বিজত্বে উত্তরণে অপারগ হই আমরা। এই প্রথম যাবতীয় মন্ত্রের বঙ্গানুবাদসহ প্রকাশিত হল সামবেদীয় সংস্কারকর্ম। ব্রহ্মজ্ঞানান্বেষী পুজক,পাঠক তথা ধর্মশাস্ত্রের অনুসিন্ধিৎসু গবেষক_ সকলকেই এই গ্রন্থ এক নতুন পথের দিশা দেবে।
রাজকাহিনী / RAJKAHINI
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রাজকাহিনী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। টডের রাজপুত কাহিনি অবলম্বনে মধ্যযুগীয় রাজপুত রাজাদের বীরত্ব, ত্যাগ ও মহিমার এমন রূপনির্মাণ শুধু বাংলা সাহিত্যে কেন আন্তর্জাতিক সাহিত্যেও দুর্লভ। রাজপুত চিত্রকলার সঙ্গে শিল্পী অবনীন্দ্রনাথের পরিচয় উনিশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে। যখন তিনি কচ ও দেবযানী, রাধাকৃষ্ণের ছবি বা মোগল চিত্রাবলী আঁকছিলেন, তখনই রাজকাহিনীর রচনা। টডের ইতিহাস অবনীন্দ্রনাথের প্রেরণা হলেও সে আকরকে ব্যবহার করে তিনি সৃজন করেছেন শব্দ-ছবির এমন এক ভিন্ন রূপ জগৎ, শৌর্য, বীর্য, আত্মোৎসর্গ এবং দেশপ্রেমের মহিমায় যা প্রোজ্জ্বল। অবনীন্দ্রনাথের সংগীতময় অসামান্য স্পন্দিত গদ্য রাজকাহিনীর কাহিনিগুলিকে দান করেছে এক অনন্য বিশিষ্টতা। কল্পনায় তিনি পূরণ করেছেন বাস্তবের সংগত অনেক দাবি। ভাষার ঐশ্বর্য সেই কল্পনালীলার সঙ্গে মিলিয়েছেন তাল। সর্বোপরি, পাঠকের অখণ্ড মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক হয়েছে অবনীন্দ্রনাথের অননুকরণীয় রচনাকৌশল যা একইসঙ্গে কুশলী ও চিত্তগ্রাহী। সবমিলিয়ে, রাজকাহিনী আজও বাঙালি পাঠকের কাছে সেরা কিশোর ক্লাসিক।